প্রাথমিক কোষ – সংজ্ঞা, আবিষ্কার, প্রকারভেদ, জীবনকাল, সুবিধা

প্রাথমিক কোশ বা প্রাথমিক কোষ এমন এক ধরনের তড়িৎ রাসায়নিক কোশ যেখানে রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

এই ধরনের কোশ কে প্রাথমিক কোশ বলে কেন ? / প্রাথমিক কোষ নামকরণের কারণ

এই সব ধরনের কোশে যেহেতু বাহ্যিক কোনো তড়িৎ শক্তি দেওয়া ছাড়াই তড়িৎ শক্তি উৎপাদন করা যায় তাই এই ধরনের কোশ কে প্রাথমিক কোশ বলে।

প্রাথমিক কোশ শুধুমাত্র একবারই ব্যবহার করা যায় এবং এর নির্দিষ্ট জীবনকাল বর্তমান। তাই এদেরকে non-rechargeable cell বলা হয়।

প্রাথমিক কোষের আবিষ্কার:

বিজ্ঞানী আলেসান্দ্রো ভোল্টা (Alessandro Volta) ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রাথমিক কোশ আবিষ্কার করেন।

১৮০০ সালে তিনি যেই প্রাথমিক কোষ আবিষ্কার করেছিলেন, সেটি জিংক এবং তামার একাধিক পাত দিয়ে গঠিত ছিল। এটি ছিল একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। এর থেকে প্রাথমিক কোশের পরিবর্তনের যাত্রা শুরু হয়।

প্রাথমিক কোষের প্রকারভেদ

প্রাথমিক কোষ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কয়েক প্রকার প্রচলিত প্রাথমিক কোশের উদাহরণ হল: শুষ্ক কোশ বা নির্জলা কোশ, সরল ভোল্টীয় কোশ, ড্যানিয়েল কোশ ইত্যাদি।

সবার প্রথমে জিংক এবং কার্বন দ্বারা তৈরি প্রাথমিক কোশ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

জিংক এবং কার্বন দ্বারা তৈরি প্রাথমিক কোশ

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাধারণত যেসব প্রাথমিক কোশব্যবহার করে থাকি তাদের বেশিরভাগই জিংক এবং কার্বন দ্বারা তৈরি এই ধরনের প্রাথমিক কোষ। টর্চ, রিমোট ইত্যাদি বিভিন্ন যন্ত্রে যেখানে কম তড়িৎ এর প্রয়োজন হয় সেখানে জিংক এবং কার্বনের তৈরি প্রাথমিক কোষ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এই ধরনের প্রাথমিক কোষে জিংক ধাতুর তৈরি তড়িৎদ্বার কে অ্যানোড হিসেবে এবং কার্বন নির্মিত তড়িৎদ্বার কে ক্যাথোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

নির্জলা কোশ – একধরণের প্রাথমিক কোশ

ক্ষারীয় প্রাথমিক কোশ

এরপর ক্ষারীয় কোশ নিয়ে আলোচনা করা হল:

ক্ষারীয় প্রাথমিক কোশ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হওয়া প্রাথমিক কোশগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান। জিংক এবং কার্বন দ্বারা তৈরি প্রাথমিক কোশের তুলনায় ক্ষারীয় প্রাথমিক কোশের অভ্যন্তরীণ ঘনত্ব বেশি হয়। কোশের অভ্যন্তরে পদার্থের ঘনত্ব বেশি হওয়ার জন্য এই কোশগুলো বেশি সময়ের জন্য তড়িচ্চালক বল সরবরাহ করতে পারে। এই ধরনের কোশে ক্ষারীয় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয় বলে এদের নাম দেওয়া হয়েছে ক্ষারীয় প্রাথমিক কোষ। ক্ষারীয় প্রাথমিক কোষে ব্যবহার করা হয় জিংকের তৈরি অ্যানোড। এই কোশে মোটামুটি ১.৫ ভোল্টের মত তড়িৎচালক বল উৎপন্ন হয়

লিথিয়াম কোশ

আরও এক ধরনের বহুল ব্যবহৃত কোশ হল লিথিয়াম কোশ:

লিথিয়ামের তৈরি প্রাথমিক কোষের অভ্যন্তরীণ ঘনত্ব উক্ত দুইটি কোশের ঘনত্বের থেকে আরও বেশি। এইজন্য যেখানে তুলনামূলক বেশি তড়িৎ শক্তি / তড়িৎ চালক বলের প্রয়োজন হয়, সেখানে লিথিয়ামের তৈরি প্রাথমিক কোশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কম্পিউটারের মাদারবোর্ড, ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদি যন্ত্রে এই ধরনের কোশ ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের কোশে লিথিয়াম ধাতুর তৈরি তড়িৎদ্বারকে অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে এর এরকম নামকরণ করা হয়েছে। এই ধরনের প্রাথমিক কোশ উক্ত দুইটি প্রাথমিক কোষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ তড়িৎচালক বল সরবরাহ করতে পারে। এটি মোটামুটি ভাবে ৩ ভোল্টের তড়িৎচালক বল সরবরাহ করে।

উল্লেখ্য, লিথিয়াম কোশ এবং লিথিয়াম আয়ন কোশ পরস্পর আলাদা।

প্রাথমিক কোশের জীবনকাল

প্রাথমিক কোশের জীবনকাল বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। মূলত যে যে বিষয়ের ওপর এটি নির্ভর করে, সেগুলি নিচের তালিকাতে দেওয়া হল –

  • কোশ তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান।
  • ব্যবহৃত উপাদানের গাঢ়ত্ব।
  • ব্যবহারের সময় (ইতিপূর্বে কতক্ষণ ধরে কোশটি ব্যবহার করা হয়েছে)
  • কোন তাপমাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছে।

মনে রাখা প্রয়োজন যে, অব্যবহৃত অবস্থায় প্রাথমিক কোশ বহু মাস ধরে ভালো থাকতে পারে, কিন্তু একবার ব্যবহার করা শুরু হলে, এর কার্যক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়।

প্রাথমিক কোষ ব্যবহার করার সুবিধা:

আগেই বলা হয়েছে, টর্চ, রিমোট, খেলনা ইত্যাদি বিভিন্ন রকম যন্ত্রে প্রাথমিক কোশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক কোষের এত বহুল ব্যবহারের পিছনে বেশ কিছু কারণ বর্তমান। এই কারণগুলি নিচে তুলে ধরা হল:

ব্যবহারের সুবিধা:

প্রাথমিক কোশ খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়। যেই যন্ত্রের মধ্যে প্রাথমিক কোশটি ব্যবহার করতে হবে, সেই যন্ত্রের মধ্যে কোশটি সঠিকভাবে স্থাপন করলেই যন্ত্রটি ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠে।

কম খরচ:

প্রাথমিক কোশের এত বহুল ব্যবহারের অন্যতম কারণ হল এর কম দাম। অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার কোশের তুলনায় প্রাথমিক কোষ দামে খুব সস্তা হয়।

রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজনহীনতা:

প্রাথমিক কোষ ব্যবহার করার জন্য কোন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না। একবার যন্ত্রের মধ্যে কোশটিকে সঠিকভাবে স্থাপন করা হলে কোনো রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই যতক্ষণ পর্যন্ত এটিতে শক্তি অবশিষ্ট থাকে, ততক্ষণ এটি চলতে থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *