‘শিক্ষামূলক ভ্ৰমণ’ সকল শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এখানে ‘শিক্ষা মূলক ভ্ৰমণ‘ এর ওপরে একটি ৪০০ শব্দের রচনা উপস্থাপন করা হল।
শিক্ষামূলক ভ্ৰমণ – ভূমিকা :
ভ্রমণ বলতে সাধারণত মানুষ মনে করে শখের বেড়ানো। নতুন নতুন অজানা জায়গায় মানুষ বেড়িয়ে অসীম আনন্দ লাভ করে। ভ্রমণ উপলক্ষ করে কয়েকদিনের থাকা খাওয়ার মধ্যে অনিবার্যভাবে কিছু বৈচিত্র্য এসে পড়ে। এজাতীয় ভ্রমণকে আমরা বলি প্রমোদ ভ্রমণ। কিন্তু আজ আর ভ্রমণকে নিছক আনন্দের উপকরণ হিসাবে দেখা হয় না। ভ্রমণ থেকেই মানুষ অর্জন করে নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন শিক্ষা। বইয়ের পাতা মুখস্থ করে মানুষ এই বিশ্ব পৃথিবী সম্পর্কে যতখানি জ্ঞান আহরণ করতে পারে তার চেয়ে অনেক বেশি সে জানতে ও শিখতে পারে ভ্রমণের মাধ্যমে।
শিক্ষামূলক ভ্ৰমণ – শিক্ষা ও ভ্রমণ :
শিক্ষামূলক ভ্রমণের অনেক প্রকারভদে আছে। ঐতিহাসিক স্থানে গেলে আমরা বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে অতীতের দ্রষ্টব্যকে নতুনভাবে উপলব্ধি করব। উদ্ভিদবিদ্যার ছাত্র-ছাত্রীরা বই পড়ে যতটুকু জানতে পারে তার থেকে অনেক বেশি জানতে পারে অরণ্য প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হলে। ছাত্র-ছাত্রী নিজের চোখে দেখে আনন্দ রস খুঁজে পায়। একটি অ্যাকোরিয়াম, একটি প্ল্যানেটোরিয়াম, একটি কারখানা বই পড়ার চাইতেও শিক্ষার্থীকে অনেক বেশি শেখার রসদ জুগিয়ে দেবে। প্রকৃতি, মানব বৈচিত্র্য, ইতিহাস ও আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে তার যোগ ঘটবে আরও অনেক বেশি। এজন্য আজকাল বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন – রক্তদান শিবির প্রতিবেদন রচনা
শিক্ষামূলক ভ্ৰমণ – ভ্রমণের উপকারিতা :
ভ্রমণ স্বভাবতই এক আনন্দময় পরিবেশের সৃষ্টি করে। তার সঙ্গে থাকে দেখবার বা অনুসন্ধান করার প্রত্যক্ষ বিষয়গুলি। শিক্ষাবিদরা মনে করেন আনন্দের সঙ্গে শিক্ষালাভের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে এরকম অসংখ্য দ্রষ্টব্য বিষয়, যাকে বলা যায় মানুষ বা প্রকৃতির হাতে তৈরি এক অসাধারণ ‘প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস’।
নিকট ও সুদূর ভ্রমণ :
শিক্ষামূলক ভ্রমণ আবার দুই রকমের। একটি নিকট ভ্রমণ আর একটি সুদূর ভ্রমণ। নিকট ভ্রমণ হল সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ। নিকটবর্তী কোনো কলকারখানা পরিদর্শন, কোনো চিড়িয়াখানা বা মিউজিয়াম দেখা অথবা প্ল্যানেটোরিয়ামে বসে আকাশের বিচিত্র রূপকে প্রত্যক্ষ করা। দূর ভ্রমণের মধ্যে ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণ বা জীবপ্রকৃতির কোনো বৈশিষ্ট্য জানার জন্য পাহাড়ে, সমুদ্রতীরে বা অরণ্যে ভ্রমণ। শিক্ষার্থী যখন একটি কারখানায় গিয়ে নিজের চোখে দেখে কী করে একটি মোটরগাড়ি তৈরি হচ্ছে বা কাগজ বানানো হচ্ছে অথবা বিস্কুট বানানো হচ্ছে তেমনি সে আর তা কখনও ভোলে না। আগ্রা দুর্গ বা তাজমহল দেখে ছাত্রের মনে মোগল আমলের কয়েকটি ঘটনা এমনভাবে গেঁথে যাবে যা কখনও বিস্মরণে হারিয়ে যায় না। এইজন্য আজকাল পাঠ্যসূচিতে শিক্ষামূলক ভ্রমণ এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে নিয়েছে।
আরও পড়ুন – গাছ আমাদের বন্ধু রচনা
শিক্ষামূলক ভ্ৰমণ – উপসংহার :
শৈশবকাল থেকেই শিশুর মানসিক, দৈহিক, প্রাক্ষেভিক ও সামাজিক বিকাশ হয়। ভবিষ্যতের সুনাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি শিশুর প্রতি প্রথম থেকে যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। পরিবারের উচিত সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য পরিবারের মতো বিদ্যালয় বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কম নয়। শিক্ষা ব্যবস্থা যদি নিছক পুঁথিগত হয় তবে শিক্ষার্থীর কাছে তা আনন্দের না হয়ে ক্লান্তিকর একঘেঁয়ে হয়ে উঠে। ভ্রমণমূলক শিক্ষা সেই ক্লান্তির হাত থেকে তাদের মুক্ত করে নতুন নতুন অনুসন্ধানে অনুপ্রাণিত করে তুলবে।