বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ তাঁর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম নামক প্রবন্ধে কলমের বিবর্তনের ইতিহাসের এক মনোজ্ঞ বর্ণনা দিয়েছেন।
একইসঙ্গে, এই প্রবন্ধে তিনি তাঁর ছোটবেলায় কলমের ব্যবহার সম্পর্কে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। পঞ্চাশ – ষাট বছর আগে ছেলেবেলায় কলম কিভাবে তৈরি করতেন সে বিষয়ে বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন ছেলেবেলায় তাঁরা কলম তৈরি করতেন বাঁশের কঞ্চি কেটে। তারপর তাতে আরো কারুকার্য করতে হতো যাতে ধীরে ধীরে চুইয়ে কালি পড়ে। ছেলেবেলায় কলাপাতায় লিখতেন তাঁরা।
সব মিলিয়ে লেখালেখি একটি ছোটখাটো অনুষ্ঠান – ছোটোবেলায় কালি তৈরির বিবরণ
এরপর প্রাবন্ধিক রচনাতে কালি তৈরীর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ছোটবেলায় এক প্রচলিত ছড়ার কথা উল্লেখ করেছেন –
তিল ত্রিফলা শিমুল ছালা / ছাগ দুগ্ধে করি মেলা / লৌহপাত্রে লোহায় ঘসি/ ছিড়ে পত্র না ছাড়া মসি।
ভালোভাবে কালি তৈরি করার জন্য এই পদ্ধতিই অবলম্বন করতে হত। কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে এত কিছু প্রাবন্ধিকের পক্ষে ছেলেবেলায় করা সম্ভব হতো না, তাই তাঁরা ‘সহজ কালি তৈরী পদ্ধতি’ অনুসরণ করে কালি তৈরি করতেন।
আরও পড়ুন – পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে – কোন ঘটনাকে অলৌকিক বলা হয়েছে – অলৌকিক ঘটনাটি কী?
বাড়িতে কাঠের উন্মে রান্না হওয়ার পর করাইয়ের তলায় যে কালি জমত, লাউপাতা দিয়ে সেই কালি ঘষে একটা পাথরের বাটিতে রাখা জলে তা গুলিয়ে নিতে হতো। প্রাবন্ধিকদের মধ্যে এই কাজে ছেলেবেলায় যারা সিদ্ধহস্ত ছিল, তাঁরা পাথরের বাটির ওই জলে হরিতকি ঘষত। প্রাবন্ধিকেরা কখনো কখনো মাকে দিয়ে আতপ চাল ভেজে, তা পুড়িয়ে, বেটে নিয়ে ওই জলে মেশাতেন। এরপর একটা খুন্তির আগার দিক লাল করে পুড়িয়ে জলে ছ্যাকা দেওয়া হত। সবশেষে সেই মিশ্রণ ন্যাকড়ার মাধ্যমে ছেকে নিলেই কালি পাওয়া যেত।
এরপর প্রাবন্ধিকের বর্ণনায় এসেছে শহরে এসে তাঁর কলম ব্যবহারের অভিজ্ঞতা। এখানে তিনি বলেছেন, কাচের দোয়াতে বড়ি গুলে কালি তৈরির কথা। প্রসঙ্গত এসেছে, ফাউন্টেন পেনের রকমফের এর কথাও।
কিন্তু, আলোচ্য উদ্ধৃতিটির মধ্যে দিয়ে প্রাবন্ধিক ফাউন্টেন পেন বা কালির বড়ি আসার আগে খাটাখাটনি করে কালি তৈরির যে প্রক্রিয়া তাকেই ছোটখাটো অনুষ্ঠান বলে অভিহিত করেছেন।