ভরের নিত্যতা সূত্র

পরমাণুর আবিষ্কার রসায়নের জগতে এক যুগান্তকারী ঘটনা। যদিও পরমাণুর অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য অনেক পরীক্ষামূলক প্রমাণের প্রয়োজন ছিল। পদার্থ যে পরমাণু দ্বারাই তৈরি হয় – এই প্রকল্প প্রমাণ করার জন্যও অনেক প্রমাণের প্রয়োজন ছিল।

শীঘ্রই অ্যান্টন ল্যাভয়সিয়ের একজন ফরাসি বিজ্ঞানী আর পরীক্ষার দ্বারা রসায়নের জগতে কিছু অকাট্য এবং যুক্তিপূর্ণ ধারণার প্রবর্তন করলেন। তাঁর অসাধারণ পরীক্ষার ফলস্বরূপ ১৭৮৯ সালে আমরা পেলাম রসায়নের জগতের যুগান্তকারী সূত্র – ভরের সংরক্ষণ সূত্র বা ভরের নিত্যতা সূত্র

ভরের নিত্যতা সূত্র – বিবৃতি / ভরের সংরক্ষণ সূত্র – বিবৃতি

যে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিক্রিয়ক পদার্থের* মোট ভর বিক্রিয়াজাত পদার্থের** মোট ভরের সমান হয়।

ভরের নিত্যতা সূত্র – বিকল্প বিবৃতি

ভরের সংরক্ষণ সূত্র মতে, কোন বিচ্ছিন্ন সংস্থার ভর কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া বা ভৌত পরিবর্তন এর দ্বারা সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না।

ভরের নিত্যতা সূত্র কে আবিষ্কার করেন

ভরের সংরক্ষণ সূত্র / ভরের নিত্যতা সূত্র আবিষ্কার করেন অ্যান্টন ল্যাভয়সিয়ের। ইনি ছিলেন একজন ফরাসি বিজ্ঞানী।

ভরের নিত্যতা সূত্র – ব্যাখ্যা / ভরের সংরক্ষণ সূত্র – ব্যাখ্যা

সাধারণত রাসায়নিক বিক্রিয়াতে দুই বা ততোধিক পদার্থ পদার্থ পরস্পরের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে এক বা একাধিক পদার্থ উৎপন্ন করে। আবার কিছু কিছু বিক্রিয়াতে, একটি রাসায়নিক পদার্থ (একটি বিক্রিয়ক) থেকে একাধিক একাধিক রাসায়নিক (একাধিক বিক্রিয়াজাত পদার্থ) উৎপন্ন হয়।

আরও পড়ুন – স্থিরানুপাত সূত্র

অর্থাৎ, কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার দ্বারা ভর সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না।

উভয় ক্ষেত্রেই, বিক্রিয়ক বা বিক্রিয়াজাত পদার্থ – এই দুইয়ের ভর সমান হবে।

ধরা যাক একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া,

A + B = C

অর্থাৎ, বিক্রিয়াতে A এবং B হল বিক্রিয়ক এবং C হল বিক্রিয়াজাত পদার্থ।
A এবং B উভয়েই উভয়ের সঙ্গে বিক্রিয়া করে C পদার্থটিকে উৎপন্ন করেছে।

এই বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভরের নিত্যতা সূত্র থেকে জানা যায়, A এবং B এর মোট ভর C এর মোট ভরের সমান হবে।

উদাহরণের সাহায্যে ভরের নিত্যতা সূত্রের ব্যখ্যা –

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) এবং সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH) এর বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় জল(H2O) এবং খাদ্য লবণ(NaCl)
ভরের নিত্যতা সূত্র থেকে বলা যায় এই বিক্রিয়াতে বিক্রিয়ক পদার্থ (অর্থাৎ হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) এবং সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH)) এর মিলিত ভর যা হবে, বিক্রিয়াজাত পদার্থ (অর্থাৎ জল (H2O) এবং খাদ্য লবণ (NaCl)) এর সমান হবে।

পাদটিকা (Additional Footnotes):

*বিক্রিয়ক পদার্থ : যেসব পদার্থ কোন রাসায়নিক বিক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে, তাদের বিক্রিয়ক পদার্থ বলে।
**বিক্রিয়াজাত পদার্থ : বিক্রিয়ক পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে যে পদার্থ উৎপন্ন হয়, তাকে বিক্রিয়াজাত পদার্থ বলে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *