তড়িৎচালক বল কাকে বলে

তড়িৎচালক বল : ভূমিকা

পদার্থবিদ্যায় বিশেষত ইলেকট্রনিক্স এর ক্ষেত্রে তড়িৎচালক বল একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক ধারণা। তড়িৎ বর্তনী সংক্রান্ত বিভিন্ন গাণিতিক এবং বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য তড়িৎচালক বল সম্পর্কে ধারণা থাকা একান্ত আবশ্যক।

নিচে তড়িৎচালক বল সম্পর্কে সম্মক ধারণা প্রদান করার চেষ্টা করা হল, তড়িৎচালক বল কি, তড়িৎচালক বল কেন তৈরি হয় এবং তড়িৎচালক বল দ্বারা কি করা যায় – এই নিবন্ধ পড়লে ছাত্রছাত্রীরা এই সমস্ত কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করতে পারবে।

বলে রাখা ভালো, তড়িৎচালক বল বলে প্রকৃত কোন বলের অস্তিত্ব নেই

✅ বলে রাখা ভালো, তড়িৎচালক বল বলে প্রকৃত কোন বলের অস্তিত্ব নেই।
✅ তড়িৎচালক বলকে ইংরাজীতে বলা হয় Electromotive Force বা সংক্ষেপে EMF

তড়িৎচালক বল কাকে বলে? / তড়িৎচালক বলের সংজ্ঞা

তড়িৎচালক বলের দুটি সংজ্ঞা সাধারণভাবে প্রচলিত।
প্রথমে তড়িৎচালক বলের প্রচলিত সংজ্ঞা দিয়ে আলোচনা করা হল:

তড়িৎচালক বলের প্রচলিত সংজ্ঞা

যখন বর্তনীতে কোন তড়িৎ প্রবাহিত হয় না অর্থাৎ বর্তনীর মুক্ত অবস্থায়, তখন বর্তনীতে যুক্ত তড়িৎ দুই প্রান্তের বিভব-প্রভেদকে ওই তড়িৎ উৎসের তড়িৎচালক বল বলা হয়।

কৃতকার্যের ভিত্তিতেও তড়িৎচালক বলের সংজ্ঞা দেওয়া যায়। কৃতকার্যের ভিত্তিতে তড়িৎচালক বলের সংজ্ঞা নিম্নরূপ –

আরও পড়ুন : কারশফের সূত্র – Kirchhoff’s Laws in Bangla

কৃতকার্যের ভিত্তিতে তড়িৎচালক বলের সংজ্ঞা

কোন একক ধনাত্মক আধান কে বদ্ধ বর্তনীর মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণ একপাক ঘোরাতে তড়িৎ উৎসর দ্বারা যে কৃতকার্য সম্পাদিত হয়, তাকে তাকে ওই তড়িৎ উৎসের তড়িৎচালক বল বলে।

এই সংজ্ঞা থেকে তড়িৎচালক বলের একটি গাণিতিক expression পাওয়া যায়,

তড়িৎচালক বল = তড়িৎ শক্তির পরিমাণ / স্থানান্তরিত তড়িৎ আধান

তড়িৎচালক বলের একক

পদার্থবিদ্যায় বিভব প্রভেদ এবং তড়িৎচালক বলের একক সম্পূর্ণ এক এবং অভিন্ন। অর্থাৎ তড়িৎচালক বলের একক :

SI পদ্ধতিতে ভোল্ট (Volt)
CGS পদ্ধতিতে স্ট্যাট ভোল্ট (Statvolt)

তড়িৎচালক বলের উৎস

বিভিন্ন উৎস থেকে তড়িৎচালক বল উৎপন্ন হয়। যেসব যন্ত্র তড়িৎ বর্তনীতে বিভব প্রভেদের সৃষ্টি করতে পারে, তাদেরকে তড়িৎচালক বলের উৎস বলা যায়। যেহেতু, রাসায়নিক শক্তি, যান্ত্রিক শক্তি, পারমাণবিক শক্তি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার শক্তি থেকে তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করা যায়, তাই বলা বাহুল্য রাসায়নিক শক্তি, যান্ত্রিক শক্তি, পারমাণবিক শক্তিই তড়িৎচালক বলের উৎস। জেনারেটর, কোশ, সৌরকোশ, ব্যাটারি – ইত্যাদি বিভিন্ন তড়িৎযন্ত্র তড়িৎচালক বলের উৎস হিসাবে কাজ করে।

ব্যাটারি

কোশ / ব্যাটারি / সেল (Cell) হল তড়িৎচালক বলের সবচেয়ে প্রচলিত উৎস। তড়িৎ বর্তনীতে তড়িৎচালক বলের উৎস দেখানোর সাধারণত ব্যাটারি / সেল-ই ব্যবহার করা হয়। সেল / ব্যাটারির মধ্যে রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং এটিই EMF এর যোগান দেয়।

ব্যাটারি বা সেল বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। সবচেয়ে প্রচলিত কয়েকটি সেল হল – গ্যালভানীয় কোশ, নির্জলা কোশ ইত্যাদি। তবে সাধারণত টিভির রিমোট, টর্চ, বাচ্চাদের খেলনা – ইত্যাদিতে যে কোশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তা হল নির্জলা কোশ।

এইসব ধরনের কোশের তড়িৎ দ্বারে যেসব তড়িৎ-রায়ায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়, তার ওপর ভিত্তি করেই এই কোশের EMF নির্ধারিত হয়।
নির্জলা কোশ সাধারণত ১.৫ ভোল্ট এর তড়িৎচালক বল সরবরাহ করে।

নির্জলা কোশ

জেনে রাখা ভালো – ব্যাটারি বা সেল – কে একই অর্থে ব্যভার করা হলেও পদার্থবিদ্যার ভাষায় ব্যাটারি এবং সেল সামান্য আলাদা। কোনো বর্তনীতে ব্যবহৃত একক যন্ত্র যেটি তড়িৎচালক বল উৎপাদনে সক্ষম, তাকে সেল (cell) বলে এবং একাধিক সেল (cell) – দ্বারা গঠিত একটি সংস্থা (যেটি তড়িৎচালক বল উৎপাদনে সক্ষম) – কে বলা হয় ব্যাটারি।

সৌরকোশ

সৌরকোশ হল এমন এক ধরনের তড়িৎ যন্ত্র, যার সাহায্যে সূর্যের আলোর সাহায্যে তড়িৎ শক্তি উৎপাদন করা যায়। এটি খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোক তড়িৎ কোশ দ্বারা তৈরি। এবং এই আলোক তড়িৎ কোশগুলি তৈরি হয় সিলিকন, জার্মেনিয়াম ইত্যাদি অর্ধপরিবাহী দ্বারা।

সৌরকোশ কীভাবে কাজ করে

এইসব আলোক তড়িৎ কোশের ওপর সূর্যের আলো এসে পড়লে ইলেকট্রনের প্রবাহের সৃষ্টি হয়, যার ফলে তৈরি হয় তড়িৎ প্রবাহ। তারের মাধ্যমে সেই তড়িৎ প্রবাহকে নিয়ে এসে যন্ত্রের সাহায্যে প্রবাহটিকে সম প্রবাহ (DC) থেকে পরিবর্তী প্রবাহতে (AC) রূপান্তরিত করে ঘরবাড়িতে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।

সৌরকোষে ব্যবহৃত অর্ধপরিবাহীর নাম কি

সৌরকোষে ব্যবহৃত হয় এমন একটি অর্ধপরিবাহী হল সিলিকন। এছাড়া সৌরকোষে জার্মেনিয়ামও ব্যবহৃত হয়।

সৌরকোষে ব্যবহৃত হয় এরূপ একটি যন্ত্রের নাম লেখ

সৌরকোষে ব্যবহৃত হয় এরূপ একটি যন্ত্রের নাম হল ইনভার্টার। ইনভার্টার সৌরকোষে উৎপন্ন সমপ্রবাহকে পরিবর্তী প্রবাহতে রূপান্তরিত করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *