নানা রঙের দিন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি নাটক। নাটকটি উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যাংশের অন্তর্ভুক্ত। এই নাটক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নগুলির মধ্যে একটি ‘শিল্পকে যে মানুষ ভালোবেসেছে তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ। ” বক্তা কে? এই উক্তির অন্তর্নিহিত অর্থ লেখো।’ প্রশ্নটি। প্রশ্নের যথাযথ উত্তর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য নীচে দেওয়া হল।
বক্তা:
উদ্ধৃত এই অংশটি সংকলিত করা হয়েছে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নামাঙ্কিত একাঙ্ক নাটক থেকে। উক্তিটি করেছেন ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের বৃদ্ধ অভিনেতা তথা কেন্দ্রীয় চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: বাংলা গানের ধারায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অবদান
উক্তির অন্তর্নিহিত অর্থ:
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বহুমুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। প্রথম জীবনে তিনি ‘নান্দীকার নাট্য গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন। পরবর্তী জীবনে তিনি ‘নান্দীমুখ’ নাম নাট্যগোষ্ঠী গঠন করেন। তিনি মনে করতেন – প্রতিভার কোনো বয়স নেই। এমনকি শিল্পীরও কোনো বয়স হয় না। শিল্পকে যে মানুষ ভালোবাসেন, তাঁর জীবনে বার্ধক্য আসে না – কেননা প্রতি মুহূর্তে শিল্পীকে অভিনয় করতে হয়। সে অভিনয়ের কোনো বয়স নেই। অভিনেতারা অভিনয়ের জন্য সবকিছু ছাড়তে পারেন কিন্তু কোনো কিছুর জন্য অভিনয় ছাড়তে পারেন না। ভয়াবহ বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ও অভিনেতারা হার স্বীকার করেন না।
একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতার কাছে ভালো-মন্দ নেই, একাকিত্ব নেই। সুখ-দুঃখের কোনো ভেদাভেদ নেই। তাঁর শরীরে রোগ প্রবেশ করতে পারে না। কেননা, রোগের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সময়টুকু তাঁর নেই। সুতরাং শিল্পকে যে মানুষ ভালোবাসেন, তাঁর জীবনে প্রেম-সংসার-পরিবার কোনো কিছুই নেই। কেননা, অভিনয়-ই তাঁর প্রেম, শিল্পই তাঁর পরিবার, শিল্পের জন্য তিনি সব কিছুই ত্যাগ করতে পারেন। রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তাই নাট্যদলের প্রম্পটার কালীনাথকে বলেছেন-
আরও পড়ুন: বাংলা বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে জগদীশচন্দ্র বসুর অবদান
“বয়স বেড়েছে তো কী হয়েছে কালীনাথ? এই তো জীবনের নিয়ম।…মৃত্যুভয়ের ওপর সে হাসতে হাসতে ডাকাতি করতে পারে
এই উক্তিই প্রমাণ করে যে, একজন শিল্পীর জীবনে শিল্পই তাঁর একমাত্র অবলম্বন। তাই তাঁর জীবনে অন্য কোনো সংকট প্রভাব খেলতে পারে না।