বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

এই নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় – বন সংরক্ষণবনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

গাছ আমাদের পরম বন্ধু – একথা আমাদের সকলেরই জানা। আমাদের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে গাছের ভূমিকা জড়িয়ে থাকলেও, প্রাণবায়ু অক্সিজেন গ্যাস সরবরাহ করা এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষণ করার মাধ্যমে গাছ আমাদের জীবনকে সরাসরি বাঁচিয়ে রাখে।

বনভূমি পৃথিবীতে গাছেদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই পৃথিবীতে বনভূমি সংরক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে বনভূমি সংরক্ষণের গুরুত্ব গুলি কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-

বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

প্রাণদায়ী বায়ু অক্সিজেন উৎপাদন :

আমাদের জীবনে বনভূমির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অক্সিজেন তৈরি। অক্সিজেন ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না, গাছ তার পাতায় সালোকসংশ্লেষ এর মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করে। বনভূমিতে প্রচুর বৃক্ষের সমাহার থাকায় বনভূমি থেকে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন তৈরি হয়।

দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায় : শুধুমাত্র আমাজনের বৃষ্টি অরণ্য থেকে পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের প্রায় ২০ শতাংশ উৎপন্ন হয়।

তাই পৃথিবীতে অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখার পেছনে বনভূমির ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বনভূমি সংরক্ষণ করা উচিত।

আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ :

বনভূমি আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাছ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বৃষ্টি আনতে সহায়তা করে। প্রকৃতিতে বনভূমির পরিমাণ কমে গেলে বৃষ্টির পর্যায় কাল ব্যাহত হবে এবং বৃষ্টির পরিমাণ কমবে। এছাড়াও অরন্যের পরিমাণ কমে গেলে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়তে থাকবে যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামে আমাদের কাছে পরিচিত।

সালোকসংশ্লেষের সময় গাছ বাতাসে মাটি থেকে শিকড়ের মাধ্যমে শোষণ করা জল ত্যাগ করে, গাছ অর্থাৎ অরন্যের পরিমাণ কমে গেলে এভাবে ত্যাগ করা জলের পরিমাণ কমে যাবে এবং বাতাস শুষ্ক হয় পড়বে।

এভাবেই অরন্যের কমে যাওয়া সরাসরি আবহাওয়ার ওপর প্রভাব ফেলে এবং দীর্ঘকাল ধরে এভাবে চলতে থাকলে তা অবশেষে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটাবে। বিভিন্ন উপায়ে বনভূমি সংরক্ষণ করে আমাদেরকে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর এই অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন রোধ করতে হবে।

বনজ সম্পদের পরিমাণ হ্রাস:

বন থেকে আমরা বিভিন্ন দামি এবং দুষ্প্রাপ্য সম্পদ পেয়ে থাকি। এমন নানান দুর্মূল্য ওষুধ আছে যা বনভূমির দুষ্প্রাপ্য গাছের থেকে প্রস্তুত করা হয়। বনভূমি ধ্বংস হতে থাকলে ধীরে ধীরে এইসব ওষুধ বা বহুমূল্য উপাদানগুলির সন্ধান আর পাওয়া যাবে না।

বন থেকে যেসব সম্পদ আমরা সংগ্রহ করে থাকি তাদের মধ্যে কাঠ অন্যতম। কাঠ থেকে বিভিন্ন বহুমূল্য আসবাবপত্র তৈরি হয়। বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেলে বনভূমি ভিত্তিক গাছের আসবাবপত্র তৈরি করতে গেলে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

আবার বনভূমির গাছ থেকে শিল্প প্রয়োজনে ব্যাপক পরিমাণে কাগজ প্রস্তুত করা হয়, একমাত্র বনভূমি সংরক্ষণ করলেই শিল্পী কাগজের এই যোগান অব্যাহত থাকবে।

মৃত্তিকা ক্ষয়:

গাছের তার শিকড় এর সাহায্যে দৃঢ়ভাবে মাটিকে আগলে ধরে রাখে। এইজন্য কোনো স্থানে বড় বৃক্ষ উপস্থিত থাকলে সেই গাছের কাছাকাছি মাটি সহজে দূরে যেতে পারে না। নদ-নদীর উপকূল অঞ্চলে এমন অঞ্চলে যেখানে নিয়মিত বৃষ্টি হয় সেখানে বনভূমি অবস্থিত থাকলে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করা যায় কিন্তু বর্তমান সময়ে বনভূমি দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কারণে এই মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না ফলো লুপ্ত হচ্ছে স্থলভূমি।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের স্থলভূমি কে আকড়ে ধরে রেখে রক্ষা করে। কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের পরিমাণ বিভিন্ন কারণে কমে যাওয়ার ফলে স্থলভূমির অপূরণীয় ক্ষয় হচ্ছে এবং বেশকিছু দ্বীপ এবং স্থলভাগসমুহ নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। স্থলভাগের এই নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় বনভূমি সংরক্ষণ করা।

জীবকুলের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ:

সমগ্র জীবকুলের সিংহভাগ বিভিন্ন বনভূমিতে বাস করে। বনভূমি ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথে এ ধরনের জীবেরা বাসস্থান সংকটের কারণে বিপন্ন হতে শুরু করবে। এর ফলে সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের প্রভাব পড়বে এবং যার ফলাফল হতে পারে বাস্তুতন্ত্রের ভাঙন। একমাত্র বনভূমি সংরক্ষণের মাধ্যমে এইসব জীবজন্তু গাছপালার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা যায়।

বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা – উপসংহার:

অর্থাৎ দেখা গেল বনভূমির ওপর মানুষ তথা সমগ্র জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বনভূমি ধ্বংস হলে তা সমগ্র জীবজগতের পক্ষেই হানিকর হয়ে উঠবে। অক্সিজেন থেকে শুরু করে দুর্মূল্য ওষুধ, প্রত্যহ লেখার জন্য ব্যবহার করা কাগজ থেকে শুরু করে আসবাবপত্র সবকিছুর জন্যই আমরা অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল।

তাই অরণ্য ধ্বংস হয়ে গেলে মানবজাতিই ধ্বংস হয়ে যাবে এবং এ কারণে আমাদেরকে এখন থেকেই বনভূমি সংরক্ষণ করা উচিত। এই উদ্যোগে বহু সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন রকম ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেছে। অরণ্য সপ্তাহ পালন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন – বছরের এইসব নির্দিষ্ট সময় গুলিতে গাছ লাগিয়ে আমরা প্রকৃতিকে আরও সবুজতর করে তোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু, সরকারের বিভিন্ন রকম সংস্থার শুধুমাত্র বছরে এই নির্দিষ্ট দিনগুলিতে এরকম উদ্যোগ পরিবেশ রক্ষার পক্ষে যথেষ্ট নয়। পরিবেশ রক্ষার তাগিদে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সকল সাধারণ মানুষকে, গাছ লাগিয়ে বৃক্ষছেদন বন্ধ করে বনভূমির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *