ভূমিকা:
Table of Contents
আজকের এই নিবন্ধে আমাদের আলোচ্য বিষয় মেন্ডেলিফ (মেন্ডেলিভ) প্রবর্তিত পর্যায় সারণির ত্রুটি সমূহ।
রাশিয়ার বিখ্যাত বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকৃতিজাত মৌল গুলি করার জন্য তার যুগান্তকারী ধারণা পর্যায় সারণি বা Periodic Table of Elements প্রকাশ করেন।
পর্যায় সারণী Periodic Table of Elements এর সাহায্যে সহজেই মৌল গুলিকে সুবিন্যাস্ত ভাবে সাজানো সম্ভব হয়।
কিন্তু মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত ছিল না। মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে বেশকিছু ত্রুটি ছিল যা পরবর্তীকালে নতুন পর্যায় সারণী বানানোর মাধ্যমে দূরীভূত করা হয়।
IUPAC বা international union for pure and applied chemistry মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণী এই ভুলগুলি দূরীভূত করে সংশোধনের মাধ্যমে আজকের আধুনিক পর্যায় সরণি / দীর্ঘ পর্যায় সারণি তৈরি করে।
এখন আলোচনা করা যাক মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে কি কি ত্রুটি ছিল –
১. অধিক পারমাণবিক গুরুত্ব বিশিষ্ট মৌলকে কম পারমাণবিক গুরুত্ব বিশিষ্ট মৌলের আগে স্থান দেওয়া
মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে মৌল গুলিকে পারমাণবিক গুরুত্বের ক্রমানুসারে সাজিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি যেই মৌলের পারমাণবিক গুরুত্বের যত কম সেই মৌলের পর্যায় সারণিতে আগে এবং যেই মৌলের পারমাণবিক গুরুত্ব যত বেশি সেই মৌলকে পর্যায় সারণিতে তত পরে স্থান দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা যায়। কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে মেন্ডেলিফ বেশি পারমাণবিক গুরুত্ব বিশিষ্ট মৌলকে কম পারমাণবিক গুরুত্ব বিশিষ্ট মৌল গুলির আগে স্থান দিয়েছেন। যেমন : মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে আর্গন (Ar – পারমাণবিক গুরুত্ব ৩৯.৯৪) কে পটাশিয়াম (K – পারমাণবিক গুরুত্ব ৩৯.১) এর আগে বসানো হয়েছে।
২. হাইড্রোজেনের বিতর্কিত অবস্থান
মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে হাইড্রোজেনের কোনো সুনির্দিষ্ট অবস্থান নেই। আসলে হাইড্রোজেনের সঙ্গে গ্রুপ IA এবং গ্রুপ VIIB উভয় গ্রুপেরই ধর্মের বিন থাকায় হাইড্রোজেনকে সুনির্দিষ্টভাবে কোন গ্রুপে বসানো যায় না। এজন্য মেন্ডেলিফ হাইড্রোজেনকে দুষ্ট মৌল বলেছেন।
৩. একই ধর্ম বিশিষ্ট মৌল কে ভিন্ন গ্রুপে এবং ভিন্ন ধর্ম বিশিষ্ট মৌল কে একই গ্রুপে স্থান দেওয়া
মেন্ডেলিফ পর্যায় সারণিতে একই ধর্ম বিশিষ্ট মৌল সমূহকে একত্র রাখতে চেষ্টা করলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে একই ধর্ম বিশিষ্ট মৌল গুলিকে ভিন্নরূপে স্থান দিয়েছেন। আবার কখনও কখনও ভিন্ন ধর্ম বিশিষ্ট মৌল গুলি কেউ একই গ্রুপে স্থান দিয়েছেন।
যেমন : Be (বেরিলিয়াম) এবং Pb (লেড) এই দুটি মৌলের ধর্ম প্রায় একই হওয়া সত্বেও এদের কে পৃথক গ্রুপে স্থান দেওয়া হয়েছে।
অপরপক্ষে Na (সোডিয়াম) বা K (পটাশিয়াম) এর মত তীব্র ক্ষার ধাতু গুলির সঙ্গে Cu (কপার), Au (সিলভার) ইত্যাদি মৌল গুলিকে একই গ্রুপে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন : মিথেন হাইড্রেট কি
৪. সমস্থানিক বা আইসোটোপের বিতর্কিত অবস্থান
মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে মৌল গুলিকে পারমাণবিক গুরুত্ব অনুসারে সাজানো হলেও আইসোটোপ বা সমস্থানিক গুলির পারমাণবিক গুরুত্ব আলাদা হওয়া সত্বেও তাদেরকে একই জায়গায় রাখা হয়েছে।
(প্রকৃতপক্ষে আইসোটোপ গুলি একই মৌলের ভিন্ন ভিন্ন রূপ)
৫. আইসোবার বা সমভরের বিতর্কিত অবস্থান
একইভাবে আইসোবার বা সমভর মৌল গুলি পারমাণবিক ভর একই হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে পর্যায় সারণীর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে রাখা হয়েছে।
৬. ষষ্ঠ এবং সপ্তম পর্যায়ে একইসঙ্গে ১৪ টি মৌলকে রাখা
ষষ্ঠ এবং সপ্তম পর্যায়ে গ্রুপ IIIA তে ল্যান্থানাম (পারমাণবিক গুরুত্ব : ১৩৯ (প্রায়)) ও অ্যাক্টিনিয়াম (পারমাণবিক গুরুত্ব : ২২৭) এর ঘরে ১৪ টি করে মৌলগুলিকে একই ঘরে রাখা হয়েছে।
৭. মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির ত্রুটি – পর্যায় সারণিতে সব মৌল উপস্থিত না থাকা / অসম্পূর্ণ সারি
মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে বেশকিছু ঘরকে ফাঁকা রাখা হয়েছিল কারণ সেই মৌল গুলি তখনও আবিষ্কৃত হয়নি।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মেন্ডেলিফ ৪ নং পর্যায়ের ৪ নং গ্রুপে সিলিকনের নীচে অবস্থিত অনাবিষ্কৃত মৌলের অস্তিত্ব ও ধর্ম সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি এই অনাবিষ্কৃত মৌলের নাম দিয়েছিলেন ইকা-সিলিকন। ১৮৮৬ সালে জার্মেনিয়াম নামক মৌল আবিষ্কৃত হলে মেন্ডেলিফের ভবিষ্যদ্বাণীকৃৎ ইকা-সিলিকন মৌলের ধর্মের সঙ্গে এই মৌলের ধর্ম মিলে যায় এবং মেন্ডেলিফ তাঁর পর্যায়সারণিতে মৌলটির যে অবস্থান নির্দিষ্ট করেছিলেন, সেখানেই মৌলটিকে অবস্থান দেওয়া হয়।
(মেন্ডেলিফ তাঁর পর্যায় সারণিতে যে ঘরগুলি ফাঁকা রেখেছিলেন সেই মৌলগুলির রাসায়নিক ও ভৌত ধর্ম সম্পর্কে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে, তাঁর মৃত্যুর পরে, মৌলগুলি আবিষ্কৃত হলে দেখা যায় মেন্ডেলিফের ভবিষ্যৎ বাণীর সঙ্গে সেই মৌলের ধর্ম গুলি হুবহু মিলে গেছে)
পর্যায় সারণির অগ্রগতিতে তার বিরাট অবদানের জন্য মেন্ডেলিফকে পর্যায় সারণির জনক বলা হয়।
এসব বিভিন্ন ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির গুরুত্ব কখনই অস্বীকার করা যায় না। কারণ মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির হাত ধরেই আধুনিক পর্যায় সারণির জন্ম হয়েছে।
প্রশ্ন – কোন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম মৌলসমূহের পর্যায় সারণি তৈরি করেছিলেন?
উত্তর- বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ সর্বপ্রথম মৌল সমূহকে সুবিন্যাস্ত ভাবে সাজানোর জন্য মৌল সমূহের পর্যায় সারণি তৈরি করেছিলেন।
প্রশ্ন – পর্যায় সারণির জনক কাকে বলা হয়?
উত্তর- মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির জনক বলা হয়।
প্রশ্ন – মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে কতগুলো মৌল ছিল?
উত্তর- মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে ৬৩ টি মৌল ছিল।