জিব্বেরেলিন একটি উদ্ভিদ হরমোন যা গাছের বৃদ্ধি এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিংশ শতকের প্রথম দিকে এক প্রকার ছত্রাকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়।
জিব্বেরেলিন হরমোনের প্রধান প্রধান কাজ
বীজের অঙ্কুরোদ্গম
বীজের সুপ্তদশা ভাঙতে এবং বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জিব্বেরেলিন। যদিও, বীজের পরিপক্ক হওয়ার সময়ে এতে জিব্বেরেলিন হরমোনের পরিমাণ বেশ কম থাকে, তথাপি বীজ অঙ্কুরোদ্গমের সময় যখন জল শোষণ করে তখন বীজে জিব্বেরেরেলিন এর মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। জিব্বেরেলিন হরমোন বিভিন্ন উৎসেচকের (যেমন: অ্যামাইলাসিস (Amylases) এর উৎপাদন তরান্বিত করে যা বীজের মধ্যে সঞ্চিত স্টার্চ বা শ্বেতসারকে বিশ্লিষ্ট করে চিনি উৎপাদন করে। এই চিনি বীজের মধ্যে সুপ্ত উদ্ভিদের শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করে এবং এর ফলে ভ্রূণমূকূলের বৃদ্ধি ঘটে এবং বীজ থেকে ভ্রূণমূকূলের উৎপত্তি হয়।
আরও পড়ুন: বায়োমাস কি
ফুলের বৃদ্ধি
জিব্বেরেলিন ফুল এবং ফুলের আনুষঙ্গিক অংশের বৃদ্ধি এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালক করে। অক্সিন এবং সাইটোকাইনিনের সঙ্গে মিলিতভাবে জিব্বেরেলিন ফুল ফোটার প্রক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে। এভাবেই সঠিক পরিবেশে এবং সঠিক সময়ে জিব্বেরেলিন ফুলের ফোটার প্রক্রিয়া ঘটানো সুনিশ্চিত করে।
কান্ডের বৃদ্ধি
জিব্বেরেলিন অনুঘটকের মত কাজ করে কোশের বৃদ্ধি এবং বিভাজন ঘটিয়ে পর্বমধ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এর ফলে কান্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। পর্বমধ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করার এই প্রক্রিয়ায় এই বিশেষ উৎসেচকের সংশ্লেষ ঘটে যা কোশের বৃদ্ধি ঘটাতে মূল ভূমিকা পালন করে। উৎসেচক কোশপ্রাচীরের বিভিন্ন উপাদানকে লক্ষ্যবস্তু করে সেগুলির বিশ্লেষণ ঘটায়, এর ফলে কোশপ্রাচীরের দৃঢ়তা ভগ্ন হয় এবং সেখানের কোশগুলির বৃদ্ধি ঘটে।
ফলের বিকাশ
ফলের বিকাশেও বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে জিব্বেরেলিন। এই হরমোন ডিম্বাশয়ের বৃদ্ধি ঘটায় যাতে বীজের বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত স্থান সুনিশ্চিত হয়। জিব্বেরেলিন ফলের আকার এবং গুণমান নিশ্চিত করতেও ভূমিকা পালন করে।
জিব্বেরেলিন হরমোনের প্রয়োগে নিষেক ছাড়ায় পার্থেনোকার্পি নামক প্রক্রিয়ার দ্বারা বীজহীন ফল উৎপাদন করা যায়।
খর্বতা এবং গাছের বৃদ্ধিতে বাধাপ্রদান
জিব্বেরেলিন গাছের বৃদ্ধি ঘটালেও জিব্বেরেলিনের অনুপস্থিতিতে কিছু কিছু প্রজাতির গাছে খর্বতার সৃষ্টি হয়। এজন্য উদ্ভিদে জিব্বেরেলিন হরমোনের পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে গাছের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণও করা যায়।
এছাড়াও পাতার বৃদ্ধিতেও জিব্বেরেলিন হরমোন উল্লেখযোগ্য কাজ করে।