নদীর সমভূমি প্রবাহে সৃষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিরূপ হল অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ। অনেকটা ঘোড়ার খুরের আকৃতি গঠন বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে অশ্বখুরাকৃতি (অশ্বক্ষুরাকৃতি) হ্রদ।
পার্বত্য প্রবাহের পর নদী সমভূমি প্রবাহে ও ব-দ্বীপ প্রবাহে স্বাধীনভাবে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ পায়। এমতাবস্থায়, প্রবাহপথে নদী কোনো বড় বাঁধার সম্মুখীন হলে অথবা নদীখাতে সঞ্চয়ের ফলে বিশাল চর সৃষ্টি হলে নদী অস্বাভাবিক সর্পিলাকার আঁকাবাঁকা পথে অগ্রসর হতে থাকে। এই সর্পিলাকার প্রবাহের ফলে সৃষ্টি হয় বিশাল বিশাল নদীবাঁক। এই নদীবাঁকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর জলধারা দুই তীরে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। নদীর অবতল তীরে অর্থাৎ, বাঁক ঘোরার সময় নদীর যে স্থান স্রোতের ঠিক সম্মুখে থাকে সেখানে জলস্রোত ক্ষয় করে। ফলে ঐ স্থান ক্রমশ ভাঙতে থাকে। অপরদিকে, বিপরীততীরে অর্থাৎ উত্তল তীরে স্রোতের আঘাত বিশেষ না থাকার ফলে কিছু সঞ্চয় হতে থাকে।
এইভাবে ক্রমান্বয়ে নদীর বাঁক ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং বাঁকের মধ্যবর্তী স্থান সংকীর্ণ হতে থাকে এবং কালক্রমে এই সামান্য ব্যবধানও অবশেষে লুপ্ত হয় এবং নদী তার পুরোনো প্রবাহ ত্যাগ করে সোজা পথে প্রবাহিত হতে শুরু করলে নদীবাঁকের এই অংশ প্রধান নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তার পাশে অবস্থান করে। এই বিচ্ছিন্ন অংশের সাথে প্রথমদিকে মূল নদীর সম্পর্ক থাকে এবং বন্যার সময় এই হ্রদে নদীর জল প্রবেশ করে। কিন্তু, সময়ের সাথে সাথে এক পর্যায়ে এই হ্রদ প্রধান নদী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায় এবং স্বতন্ত্রভাবে (ঘোড়ার ক্ষুরের ন্যায় অর্ধচন্দ্রাকারে) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ রূপে অবস্থান করে।