তড়িৎ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের ফলে উৎপন্ন হয় তাপ। এই উৎপন্ন তাপের পরিমাণ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
কোনো তড়িৎ বর্তনীতে নির্দিষ্ট সময় ধরে নির্দিষ্ট মানের তড়িৎ প্রবাহের ফলে কতটা তাপ উৎপন্ন হচ্ছে এবিষয়ে একটি সূত্র প্রণয়ন করেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জেমস প্রেস্কট জুল – তাঁর প্রণয়ন করা সেই সূত্র জুলের সূত্র নামে পরিচয়।
জুলের সূত্র থেকে জানা যায়, কোন বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ যে যে বিষয়ের উপর নির্ভর করে সেগুলি হল –
- প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহমাত্রা।
- বর্তনীর রোধ।
- সময়
আরও পড়ুন – কারসফের সূত্র
জুলের সূত্র অনুসারে,
তড়িৎ বর্তনিতে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ –
- বর্তনীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহমান বর্গের সমানুপাতিক।
- বর্তনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রোধের সমানুপাতিক।
- বর্তনীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত তড়িতের সময়।
জুলের সূত্রের গাণিতিক রূপ
প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহমাত্রা – কে I দ্বারা, বর্তনীর রোধ কে R দ্বারা এবং সময় কে t দ্বারা প্রকাশ করা হলে, জুলের সূত্র অনুসারে,
H ∝ I² [যখন, R ও t স্থির]
H ∝ R [যখন, I ও t স্থির]
H ∝ t [যখন, I ও R স্থির]
যৌগিক ভেদের উপপাদ্য থেকে পাই,
H ∝ I²Rt [যখন, I, R ও t পরিবর্তনশীল]
ওপরের এই সূত্রটিই তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল সংক্রান্ত জুলের সূত্র।
জুলের সূত্রের একক
SI পদ্ধতিতে
আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বা SI পদ্ধতিতে জুলের সূত্রে ব্যাবহৃত রশিগুলির একক নিচে দেওয়া হল
H বা উৎপন্ন তাপের একক জুল (J দ্বারা প্রকাশ করা হয়)
I বা তড়িৎ প্রবাহমাত্রার একক অ্যাম্পিয়ার (A দ্বারা প্রকাশ করা হয়)
R বা রোধের একক ওহম (Ω দ্বারা প্রকাশ করা হয়)
t বা সময়ের একক সেকেন্ড (s দ্বারা প্রকাশ কত হয়)
GGS পদ্ধতিতে
মেট্রিক পদ্ধতিতে বা CGS পদ্ধতিতে সূত্রে ব্যবহৃত রশিগুলির একক নিচে দেওয়া হল
H বা উৎপন্ন তাপের একক আর্গ (erg দ্বারা প্রকাশ করা হয়)
I বা তড়িৎ প্রবাহমাত্রার একক অ্যাবঅ্যাম্পিয়ার (abA দ্বারা প্রকাশ করা হয়)
R বা রোধের একক অ্যাবওহম (abΩ দ্বারা প্রকাশ করা হয়)
t বা সময়ের একক সেকেন্ড (s দ্বারা প্রকাশ কত হয়)
উল্লেখ্য, তড়িৎ প্রবাহমাত্রার মান জানা ছাড়াও বিভব প্রভেদের মান জানা থাকলেও জুলের সূত্র প্রয়োগ করে তড়িৎ প্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপের মান গণনা করা যায়।
জুলের সূত্রের প্রয়োগ
ব্যবহারিক পদার্থবিদ্যায় জুলের সূত্রের বিভিন্ন প্রয়োগ রয়েছে। জুলের সূত্রের সাহায্যে কোন বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব। তড়িৎ বর্তনী নির্মাণ করতে এবং বিশ্লেষণ করার সময় এই সূত্রের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। গিজার, ইন্ডাকশন ওভেন ইত্যাদি বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতিতে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ গণনা করতে জুলের প্রয়োগ দেখা যায়।
তবে শুধুমাত্র যে পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রেই জুলের সূত্রের প্রয়োগ দেখা যায় এমনটা নয়। রসায়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও জুলের সূত্রের প্রয়োগ দেখা যায়। রসায়নের যেসব বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে তাপের আদানপ্রদান ঘটে, বিশেষত তড়িৎ প্রবাহের ফলে তাপের আদানপ্রদান ঘটে, সেইসব বিক্রিয়ায় জুলের সূত্রের প্রয়োগ দেখা যায়।
জুলের সূত্রের সীমাবদ্ধতা
তবে জুলের সূত্রের কিছু সীমাবদ্ধতাও বর্তমান।
স্থির তড়িৎ প্রবাহমাত্রা
জুলের সূত্রের আরও একটু অসুবিধা হল, এই সূত্র তখনই প্রয়োগ করা সম্ভব যখন যে যন্ত্র নিয়ে কাজ করা হচ্ছে তার সব স্থানে সমান তাপমাত্রা বিরাজ করবে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এমন যন্ত্র নিয়ে কাজ করা হতে পারে যার সব জায়গায় তাপমাত্রা সমান নয়। তাই যখন এই ধরনের যন্ত্র নিয়ে কাজ করা হয় তখন বিশেষ সূত্রের সাহায্যে তাপমাত্রা বিষয়ে গবেষণা করে তবেই জুলের সূত্র প্রয়োগ করা হয়।
স্থির তাপমাত্রা
জুলের সূত্রে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহমাত্রার মানকে স্থির হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে সবসময় এরকমটা ঘটে না। বাস্তব ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে সময়ের সঙ্গে তড়িৎ প্রবাহ মাত্রার মানে বদল ঘটছে। এই ধরনের সূত্র কে সরাসরি প্রয়োগ করা যায় না। অর্থাৎ যে ধরনের বর্তনীতে সময়ের সঙ্গে পরিগ্রহ মাত্রার মানে পরিবর্তন হয় সেই সমস্ত বর্তনীতে চুলের সূত্র সরাসরি কার্যকর নয়। (যদিও এই সূত্রে সামান্য কিছু পরিবর্তন করে জুলের সূত্র প্রয়োগ করা সম্ভব এবং তড়িৎ প্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ গণনা করা সম্ভব)