স্থিরানুপাত সূত্র

রাসায়নিক সংযোগসূত্রের বিভিন্ন সূত্রগুলির মধ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হল স্থিরানুপাত সূত্র বা Law of constant proportion.

আগের পোস্টে বিশদে আলোচনা করা হয়েছে ভরের নিত্যতা সূত্র বা ভরের সংরক্ষণ সূত্র নিয়ে।

ভরের নিত্যতা সূত্র রাসায়নিক সংযোগ সূত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলির মধ্যে একটি।

নিচে স্থিরানুপাত সূত্র, স্থিরানুপাত সূত্রের বিবৃতি, ব্যাখ্যা এবং উদাহরণ সহযোগে স্থিরানুপাত সূত্র ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

স্থিরানুপাত সূত্র : বিবৃতি

যে উৎস থেকেই সংগ্রহ করা হোক না কেন বা যেভাবেই তৈরি করা হোক না কেন বা নমুনার যাই ভর হোক না কেন কোন নির্দিষ্ট যোগের মধ্যে যৌগের গঠনকারী মৌলসমূহ সর্বদা ভরের স্থির অনুপাতে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে।

স্থিরানুপাত সূত্রের আবিষ্কারক / স্থিরানুপাত সূত্র কে আবিষ্কার করেন?

স্থিরানুপাত সূত্র আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী জোসেফ লুইস প্রাউস্ট (Joseph Louis Proust)। তিনি ছিলেন একজন ফরাসি বিজ্ঞানী এবং রসায়নবিদ। স্থিরানুপাত সূত্র আবিষ্কৃত হয় ১৭৯৪ সালে।

বিজ্ঞানী জোসেফ প্রাউস্ট সালফাইভ ধাতুর অক্সাইড এবং সালফেট এর ওপর বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই সূত্র আবিষ্কার করেন।

স্থিরানুপাত সূত্র – ব্যাখ্যা

ধরা যাক কোন রাসায়নিক পদার্থে A মৌল এর ভর x এবং ওই রাসায়নিক পদার্থে B মৌল এর ভর y

যদি ওই পদার্থের ক্ষেত্রে স্থিরানুপাত সূত্র সত্য হয় তবে, ওই পদার্থে x এবং y এর অনুপাত সর্বদা সমান থাকবে।

উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক একটি যৌগ AB, স্থিরানুপাত সূত্র থেকে আমরা জানতে পারি,

x/y = ধ্রুবক

যদি ওই যৌগে দুইয়ের বেশি মৌল উপস্থিত থাকে তবে এইসূত্র অনুযায়ী সব মৌলের ভরের অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক থাকবে।

এখন একটি যৌগ যদি ABC হয়, তাহলে স্থিরানুপাত সূত্রের সাহায্যে লেখা যায় –
x/y = ধ্রুবক, y/z = ধ্রুবক। [x, y, z হল যথাক্রমে যৌগে প্রতিটি মৌলের ভর]

উদাহরণের সাহায্যে স্থিরানুপাত সূত্র – ব্যাখ্যা

প্রথম উদাহরণ – জল

আমাদের সবচেয়ে পরিচিত যৌগ জলের কথা ধরা যাক। জলের সংকেত H2O।
অর্থাৎ জলের মধ্যে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের ভরের অনুপাত ১:৮ (1:8)

স্থিরানুপাত সূত্র অনুযায়ী যেভাবেই / যেখান থেকেই জল সংগ্রহ করা হোক না কেন, জলের যেকোন নমুনাই যতটা পরিমাণ জল থাকুক না কেন, সব সময়ই জলে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের ভরের অনুপাত হবে ১:৮ (1:8)

দ্বিতীয় উদাহরণ – অ্যামোনিয়া

আরও একটি উদাহরণের কথা বিবেচনা করা যাক – অ্যামোনিয়া। অ্যামোনিয়ার রাসায়নিক সংকেত NH3

অ্যামোনিয়া প্রকৃতি থেকেও পাওয়া যায় আবার রাসায়নিকভাবে তৈরিও করা যায়।
স্থিরানুপাত সূত্র অনুযায়ী অ্যামোনিয়া যেখান থেকেই সংগ্রহ করা হোক না কেন বা যেভাবেই প্রস্তুত করা হোক না কেন, অ্যামোনিয়ার মধ্যে সর্বদা নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন এর অনুপাত হবে ১:৩ (1:3)

স্থিরানুপাত সূত্র – সীমাবদ্ধতা

প্রায় প্রতিটি রাসায়নিক যৌগের ক্ষেত্রে স্থিরানুপাত সূত্র কাজ করলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।

১. আইসোটোপ এর ক্ষেত্রে স্থিরানুপাত সূত্রের ব্যতিক্রম ঘটে। তাই কোন যৌগ যদি কোন মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপ দ্বারা তৈরি হয় তাহলে ওই যৌগে এই সূত্রের ব্যতিক্রম ঘটে।

২. নন স্টয়সিওমেট্রিক যৌগের ক্ষেত্রে স্থিরানুপাত সূত্রের ব্যতিক্রম ঘটে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *