বায়োমাস কি ? | বায়োমাস কী কাজে ব্যবহার করা হয় ? | বায়োমাস শক্তি | বায়োমাস ব্যবহারের সুবিধা

প্রকৃতিতে মূলত দুই রকম পদ্ধতিতে শক্তি উৎপাদন করা হয়। একটি চিরাচরিত পদ্ধতি বা প্রচলিত পদ্ধতি, অপর একটি হল ও প্রচলিত পদ্ধতি।

প্রচলিত শক্তির অন্তর্গত আমাদের পরিচিত একটি শক্তি উৎস যেমন : কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি থেকে পাওয়া শক্তি।

[বিশেষ দ্রষ্টব্য : মনে রাখবে, জলশক্তির বহুল ব্যবহার এর জন্য এখন আর জলবিদ্যুৎ শক্তিকে অপ্রচলিত শক্তির উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয় না, বর্তমানে জলবিদ্যুৎ শক্তিকে প্রচলিত শক্তির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।]

অপরপক্ষে অপ্রচলিত শক্তির অন্তর্গত কয়েকটি শক্তির উৎস হল বায়ুশক্তি, সৌরশক্তি, বায়োমাস প্রভৃতি।

বায়োমাস কি

ইংরেজি শব্দ biology থেকে উৎপন্ন শব্দ বায়ো (Bio) কথার অর্থ হল জীব এবং ইংরেজি শব্দ mass  এর অর্থ হলো ভর। অর্থাৎ বায়োমাস কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল জীব-ভর

 International Renewable Energy Agency এর একটি গবেষণা অনুযায়ী বায়োমাস শক্তি উৎস থেকে প্রতি বছরে প্রায় ১০০-১৩০ এক্সাজুল শক্তি উৎপন্ন করা যেতে পারে।

বায়োমাস শক্তি কাকে বলে ?

বিভিন্ন প্রকার উৎস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন জীব দেহ জীব দেহের কার্বন ঘটিত অংশ (বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের পচা কলা, কৃষি ক্ষেত্রের বর্জ্য পদার্থ, আখের ছিবড়ে রান্নাঘরের বিভিন্ন অব্যবহৃত পচনশীল জৈব পদার্থ, মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ, প্রাণীদের মলমূত্র) অথবা বায়োমাস এর মধ্যে যে শক্তি অন্তর্নিহিত থাকে,  তাকে বায়োমাস শক্তি বলে।

🔬 বায়োমাস শক্তি মূলত ৩ টি উৎস থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে –

  • কাঠ
  • বর্জ্য পদার্থ
  • শস্য

বায়োমাস কি কাজে ব্যবহার করা হয় ? / বায়োমাসের ব্যবহার :

বায়োমাসকে খুব কম ক্ষেত্রেই সরাসরি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বায়োমাস মূলত যে কাজের জন্য ব্যবহার করা হয় তা হল তাহলে বায়োমাস শক্তি উৎপাদন।

বায়োমাস শক্তি একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, তাই ইদানিং বায়োমাসকে শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে শক্তি শক্তির উৎস হিসেবে বায়োমাসের চাহিদা বাড়ছে।

বায়োমাস ব্যবহারের সুবিধা :

১) বায়োমাস একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস, তাই বায়োমাসকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বায়োমাস থেকে শক্তি উৎপাদন করলে কয়লা-পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি প্রচলিত উৎস থেকে শক্তি উৎপাদন করতে যে পরিমাণ দূষণ হয়, তার থেকে কম দূষণ ঘটে।

২) মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বায়োমাস থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের পর অবশিষ্ট জৈব আবর্জনা থেকে সার উৎপাদন করা হয়। নাইট্রোজেন ও ফসফরাস সমৃদ্ধ হওয়ায় এই সারের গুণগতমান খুব ভালো হয়।

৩) প্রকৃতিতে যেসব জৈব আবর্জনা পড়ে থাকলে পরিবেশে দূষণ ঘটে, সেই সব আবর্জনা থেকে বায়োমাস শক্তি উৎপাদন করলে পরিবেশ দূষণ কিছুটা হলেও কমানো যায়।

বায়োমাস ব্যবহারের অসুবিধা :

পরিবেশগত সমস্যা

অন্যান্য শক্তি উৎসের মত বায়োমাস শক্তি ব্যবহার করারও কিছু সমস্যা আছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং

বায়োমাসের অন্যতম প্রধান উপাদান হল মিথেন। কাজেই, বায়োমাসকে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করলে পরিবেশে / বায়ূমন্ডলে মিথেনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

বায়ুদূষণ

বায়োমাসকে পোড়ানো হলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড সহ বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গত হয়, এগুলি বায়ুতে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়।

বনচ্ছেদন

বায়োমাস শক্তির অন্যতম উৎস গাছপালা। চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেশি পরিমাণে বায়োমাস উৎপন্ন করতে গেলে অনেক গাছ কাটতে হবে, এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে।

অন্যান্য অসুবিধা

বায়োমাস অন্যান্য প্রচলিত শক্তি (জলবিদ্যুৎ শক্তি) ও অপ্রচলিত শক্তির (বায়ুশক্তি) মতো অতটা কার্যকরী নয়।

আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (International Energy Agency) একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী 2019 সালে পৃথিবীর প্রাথমিক শক্তির চাহিদার ১০% এসেছে বায়োমাস শক্তি থেকে। এর মধ্যে বেশিরভাগই উৎপন্ন হয়েছে আফ্রিকার দেশগুলি থেকে।

আফ্রিকা মহাদেশের উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মোট শক্তির প্রায় ৩০% উৎপন্ন হয় বায়োমাস থেকে।

বায়োমাস সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং উত্তর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *