মাঠে ফসল ফলানোর জন্য যে ২ ধরণের সার ব্যবহার করা হয়, সেগুলি হল – ১) জৈব সার, ২) অজৈব সার।
অজৈব সার কাকে বলে?
অজৈব সার হল বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান যেমন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বা ইউরিয়া থেকে সংশ্লেষিত সার।
এইসব সার জৈব সারের মতোই বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমৃদ্ধ। এতে যথেষ্ট পরিমাণে নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম এবং ফসফরাসে থাকে, যা উদ্ভিদে বেড়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য উপাদান।
জৈব সারের তুলনায় অজৈব সার তাড়াতাড়ি মাটিতে মিশে যেতে পারে এবং দ্রুত উদ্ভিদকে পুষ্টি উপাদান প্রদান করতে সক্ষম।
আরও পড়ুন – জৈব সার কাকে বলে
অজৈব সারের উপাদান:
অজৈব সার বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক উপাদান দ্বারা তৈরি হয়। এইসব উপাদান গুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উপাদান নিচে সবিস্তারে বর্ণনা করা হল-
১. নাইট্রোজেন:
অজৈব সারের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নাইট্রোজেন। নাইট্রোজেন গাছের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন পাতা এবং শাখা প্রশাখার বৃদ্ধির জন্য খুবই উপযোগী।
২. ফসফরাস:
উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার জন্য নাইট্রোজেনের মতো ফসফরাসও জরুরী। ফসফরাস গাছের মূলের ভিত্তিতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র মূলই নয়, ফসফরাস গাছের ফুল এবং বীজ উৎপাদনেও সাহায্য করে। ATP, যাকে জীবের জীবের শক্তির সংরক্ষণের প্রধান অণু, তারও মূল উপাদান ফসফরাস।
৩. পটাশিয়াম:
পটাশিয়ামও গাছের বেড়ে ওঠার জন্য খুবই জরুরী। এই মৌলটি গাছের জল ধারণ এবং জল শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং গাছের রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পটাশিয়াম গাছের পত্ররন্ধকে খুলতে ও বন্ধ করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন – বায়োমাস
অজৈব সার ব্যবহারের সুবিধা:
অজৈব সার ব্যবহারের বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে।
প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের নির্ভরযোগ্য উৎস:
অজৈব সার উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের (যেমন: নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, ফসফরাস) নির্ভরযোগ্য উৎস হিসাবে কাজ করে। অজৈব সার ব্যবহারের ফলে উদ্ভিদের এইসব মৌলসমূহকে মাটি থেকে সরাসরিভাবে এবং আরও সহজে সংগ্রহ করতে পারে।
ব্যবহারের সুবিধা:
অজৈব সারকে খুব সহজেই জমিতে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়াও অজৈব সারাক্ষণ খুব সহজে বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, কাজেই জৈব সারের তুলনায় অজৈব সার ব্যবহার করা অনেক বেশি সুবিধা জনক। অজৈব সার জমিতে প্রয়োগ করা বেশ সুবিধাজনক। বৃহৎ আকারের জমিতে জৈব সারের তুলনায় অজৈব সার ব্যবহারের ফলে সময় সঞ্চিত হয় এবং পরিশ্রম এর অবসান ঘটে।
সঠিক গুণগত মান:
অজৈব সার রাসায়নিকভাবে উৎপাদিত হওয়ায় এতে উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানগুলি নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকে। এই সার মাটিতে প্রয়োগ করা হলে মাটির গুণগত মান এবং উর্বরতাও ঠিক থাকে। উপরন্ত, পরিবেশে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে পুষ্টি উপাদানের বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটে না অর্থাৎ পুষ্টি উপাদানগুলি প্রায় ঠিকই থাকে।
সাশ্রয়ী:
জৈব সার এর তুলনায় অজৈব সার অনেক বেশি সাশ্রয়ী। যেহেতু কারখানায় একই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে অজৈব সার উৎপাদন করা হয় সেজন্য জৈব সার অপেক্ষা অজৈব সারের উৎপাদন ব্যয় কম।
অজৈব সার ব্যবহারের অসুবিধা
অজৈব সার ব্যবহারের যেমন সুবিধার রয়েছে তেমন বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। জৈব সার ব্যবহারের প্রধান অসুবিধাগুলি নিচে উল্লেখ করা হল-
১. পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর:
অজৈব সার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এই সার ব্যবহারের ফলে বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষিত হয়। অজৈব সার মাটিতে মিশে মাটি দূষণ এবং জলের উৎসের সঙ্গে মিশে জল দূষণ ঘটায়।
২. মাটির গুণগত মানের অবনমন:
অজৈব সারের বেশি ব্যবহারের ফলে মাটির গুণগত মানের অবনমন ঘটে।
৩. মাটির উর্বরতা হ্রাস:
একই জমিতে বহু বছর ধরে বারবার অজৈব সার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়।